সাধারণত একটু বড় বাচ্চারা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে সাধারণত নিজের শরীরই নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ও জন্ডিস দীর্ঘমেয়াদী হয়।
সাধারণত একটু বড় বাচ্চারা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে সাধারণত নিজের শরীরই নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ও জন্ডিস দীর্ঘমেয়াদী হয়।
ক্রমশঃ বয়সের তুলনায় শরীরের ওজন বৃদ্ধি, ঘরের খাবারের পরিবর্তে বাইরের ফাস্ট ফুডের প্রতি মনোযোগিতা, মুটিয়ে বা বলকি হয়ে যাওয়া, বাইরে খেলাধুলা কমিয়ে দেয়া এবং টিভি, ট্যাব ও কম্পিউটার এর প্রতি আসক্তি এ রোগের অন্যতম কারণ। অস্বাভাবিক মাত্রায় চর্বি জমে বাচ্চাদের লিভার সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে।
খাবারের ল্যাকটোজ থেকে তৈরি গ্লাইকোজেন লিভারে ক্রমশঃ জমা হয়ে জন্ডিস, লিভার বড় হয়ে পেট ফুলে যাওয়া, লিভার সিরোসিস ও কখনও কখনও খিচুনি পর্যন্ত হতে পারে।
বাচ্চার মা যদি হেপাটাইটিস বি ও সি জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত থাকে অথবা ওই জীবাণুযুক্ত রক্ত যদি বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করানো হয়, তবে সহজেই হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস বাচ্চার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।
হাত, পা, মাথা ও শরীরের অন্য জায়গার মতো বাচ্চাদের লিভারেও ফোঁড়া হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া বা প্রটোজোয়ার সংক্রমণ এ রোগের অন্যতম কারণ। উচ্চমাত্রার জ্বর, পেটের ডানে-উপরের দিকে প্রচন্ড ব্যাথা ও জন্ডিস এ রোগের অন্যতম লক্ষণ।
হেপাটাইটিস বি, সি, অটোইমিউন হেপাটাইটিস ও উইলসন রোগের কারণে বাচ্চাদের সাধারণত লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে। ক্রমশ শুকিয়ে যাওয়া, পেটে পানি আসা ও দীর্ঘমেয়াদি জন্ডিস এ রোগের অন্যতম লক্ষণ।
বড়দের মতো বাচ্চাদেরও টিউমার হতে পারে এবং এটা যদি লিভারে হয় তখন তাকে আমরা হেপাটব্লাসটোমা বলে থাকি। এতে লিভার ক্রমশ বড় হয়ে জন্ডিস পর্যন্ত হতে পারে।
শিশুর জন্মের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় দিন থেকে চোখ ও শরীর ক্রমশঃ হলুদ হতে শুরু করে। যা বাড়তে থাকে সপ্তম দিন পর্যন্ত। এর পর ধীরে ধীরে হলুদ কমতে শুরু করে যা দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষে অনেকটাই কমে যায়। নবজাতকের এ জন্ডিসকে Physiological jaundice বা স্বাভাবিক জন্ডিস বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে লোহিত রক্তকনিকা খুব তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে গেলে, মার 'নেগেটিভ' বা 'ও' রক্তের গ্রুপ হলে, থাইরয়েড হরমোনের অভাব ও কখনও কখনও বুকের দুধও এ জন্ডিসের কারণ হতে পারে। কিন্তু জন্ডিস যদি দুই সপ্তাহের বেশি সময় স্থায়ী হয়, সাথে পায়খানা সাদা ও প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হয় তখন জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
নবজাতকের জন্ডিস যদি দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, সাথে সাদা পায়খানা ও প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হয় তখন এটাকে প্যাথলজিক্যাল জন্ডিস বা অস্বাভাবিক জন্ডিস বলা হয়ে থাকে। এরকম উপসর্গ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
উচ্চমাত্রার জ্বর যদি সাতদিনের বেশি স্থায়ী হয়, তখন আমাদের সন্দেহের তালিকায় টাইফয়েড থাকে এক নম্বরে। জ্বরের সাথে পেটে ব্যাথা, পাতলা পায়খানা, খাওয়া কমে গিয়ে অসম্ভব দুর্বলতা এবং কখনও কখনও লিভার সংক্রমিত হয়ে জন্ডিস পর্যন্ত হতে পারে।
একটু বড় বাচ্চাদের জন্ডিস সাধারণত 'হেপাটাইটিস এ' ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে। জীবাণুযুক্ত পানি ও বাইরের রসালো তরল খাবারই এ রোগের অন্যতম কারণ। খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, চোখ ও প্রস্রাব ক্রমশঃ হলুদ হয়ে যাওয়া ও পেটে ব্যথা এ রোগের অন্যতম লক্ষণ।
কপার একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ধাতু যা বিভিন্ন খাবার থেকে আমরা পেয়ে থাকি। নির্দিষ্ট কিছু কার্য সম্পাদনের পর লিভার হয়ে অতিরিক্ত কপার আমাদের প্রস্রাব ও পায়খানার সাথে বের হয়ে যায়। বিপত্তিটা তখনই ঘটে যখন অতিরিক্ত কপার বের না হয়ে লিভার এ জমা শুরু করে। যা পরবর্তীতে লিভার থেকে রক্ত, চোখ ও ব্রেইনে বাসা বাঁধে।