Welcome to Gastroenterology World!


Pediatric Gastroenterology

শিশুর পেট ফুলে যাওয়া (Abdominal distension) শিশুদের জন্মগত কিছু ত্রুটি আছে যে কারণে নবজাতকের পেট ফুলে যেতে পারে। নাড়ির রাস্তা কোন কোন জায়গায় বন্ধ থাকলে (Jejunal & Ileal atresia), কোন জায়গায় নাড়ি সরু হয়ে গেলে (Hirschsprung disease), পায়খানার রাস্তা বন্ধ থাকলে (Imperforate anus), নাড়ির ইলিয়াম নামক জায়গায় মিকোনিয়াম জমে গেলে (Meconium ileus or plug) এবং নাড়িতে জীবাণু সংক্রমণ হলে (Necrotizing Enterocolitis) পেট ফুলে যেতে পারে। এছাড়াও নাড়িতে প্যাঁচ লাগলে (Intestinal obstruction), পেটে পানি আসলে (Ascites), কোষ্টকাঠিন্যর কারণে অনেকদিন যাবৎ পায়খানা না হলে (Constipation), পেটে অতিমাত্রায় কৃমি হলে, পেটে গ্যাস জমে গিয়ে, পেটের যকৃৎ ও প্লীহা বড় হয়ে অথবা পেটে কোন টিউমার (Mass) হলে পেট ফুলে যেতে পারে।

জন্মের ১০ দিন বয়স থেকে প্রায় চার মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের পেটে এক ধরনের ব্যাথা হয়, এতে বাচ্চারা মোরামুড়ি বা কখনও কখনও সন্ধ্যার পর অস্বাভাবিক কান্না করে। প্রায় তিন সপ্তাহ যাবত এ কান্নাকে আমরা Baby Colic বা Infantile Colic বলে থাকি।

গ্লুটিন জাতীয় খাবার যেমন গম, বার্লি অনেক বাচ্চাই হজম করতে পারে না। ফলে ঘন ঘন নরম পায়খানা ও বদহজম হয়ে বাচ্চাদের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। একে বলা হয় Gluten sensitive enteropathy বা Celiac disease.

অনেক সময় বাচ্চাদের প্রতিদিন পায়খানা হয় না বা পায়খানা এতটাই শক্ত হয় যে করার সময় অসম্ভব ব্যাথা হয়, এমনকি রক্ত পর্যন্ত বের হতে পারে। সপ্তাহে তিনবারের কম শক্ত পায়খানা হলে এটাকে বলা হয় Contipation। শক্ত পায়খানা থেকে অসম্ভব পেটে ব্যথা, Anal fissure, Hemorrhoids, এমনকি Rectal ulcer পর্যন্ত হতে পারে।

পুরো পৃথিবী ব্যাপী গরুর দুধ বাচ্চার বয়স এক বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত দিতে নিষেধ করা হয়। এই দুধে এক বিশেষ ধরণের এলার্জিক কেসেইন প্রোটিন থাকে যার কারণে বাচ্চার শরীরে লাল লাল দানা, পেটে ব্যথা বা পায়খানার সাথে রক্ত পর্যন্ত যেতে পারে।

খালাতো, মামাতো বা চাচাতো ভাই-বোন অথবা রক্তের সম্পর্ক আছে এমন দুইজন এর মধ্যে বিয়ে হলে সাধারণত এ রোগের আবির্ভাব ঘটতে পারে। শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে যে তরল জাতীয় পদার্থ (Mucus, tears, sweat, saliva, digestive juices) বেরিয়ে আসে সেগুলো সাধারণত পাতলা এবং সহজে বহনযোগ্য হয়ে থাকে। কিন্তু বাচ্চা যদি এ রোগে আক্রান্ত হয় তবে তরল জাতীয় পদার্থগুলো ক্রমশঃ ঘন ও আঠালো হয়ে ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট ও পাতলা পায়খানা হয়ে শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

চব্বিশ ঘন্টায় তিনবার বা তার বেশি পাতলা পায়খানা হলে আমরা একে ডায়রিয়া বলে থাকি। পানি ফুটিয়ে না খাওয়া, পয়ঃ পরিষ্কার না থাকা ও বিভিন্ন জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে ডায়রিয়া হতে পারে। সাধারণত ৭-১০ দিন যাবৎ ডায়রিয়া থাকলে তাকে বলা হয় Acute watery diarrhea। ডায়রিয়া ১৪ দিন বা তার বেশি থাকলে একে বলা হয় Persistent diarrhea। আবার কিছু কিছু রোগ আছে যেমন Celiac disease, Cystic fibrosis, Inflammatory bowel diasease এ মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর ডায়রিয়া থাকতে পারে, তখন একে বলা হয় Chronic diarrhea।

খাদ্যনালীর দুর্বলতার কারণে অথবা খাদ্যথলিতে পৌঁছানো খাবারগুলো আবার বিপরীতমুখী হয়ে খাদ্যনালিতে আসলে (Gastroesophageal reflux disease) বাচ্চার গিলতে অসুবিধা হতে পারে। একে আমরা Dysphagia বলে থাকি। বুকের মাঝখানে চাপ অনুভব, জ্বালা-যন্ত্রনা বা ব্যাথায় কাতর হওয়া, কাশি ও সাথে কখনও কখনও শ্বাসকষ্ট এ রোগের অন্যতম লক্ষণ।

অনেক সময়ই বাচ্চারা খেতে চায় না। তখন জোর করে খাওয়ানো হয়। এতে বাচ্চার খাবার প্রতি তীব্র অনীহা, খাবার পর বমি এবং কখনও কখনও শ্বাসনালিতেও খাবার চলে যেতে পারে।

খাদ্যনালীর নিচের অংশে ঘা বা আলসার হলে (Esophageal ulcer), জীবাণু সংক্রমণ হলে (Esophagitis) অথবা শিরাগুলো ফুলে গিয়ে (Esophageal varices) মুখ দিয়ে বমির সাথে রক্তক্ষরণ হতে পারে। আবার খাদ্যথলিতে জীবাণু সংক্রমণ, ঘা বা আলসার এবং শিরাগুলো ফুলে গিয়ে একই ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও বৃহদন্ত্রে পলিপ (Polyp), কোষ্ঠকাঠিন্যর কারণে পায়খানার বাইরের দিকের রাস্তা ফেটে যাওয়া (Anal fissure), জীবাণু সংক্রমণ (Colitis), রক্ত পায়খানা (Invasive diarrhea) এবং অনেকগুলো ছোট ছোট ঘা বা আলসার (Inflammatory bowel disease) হয়ে পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে।

জন্মের পর বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চারা দিনে দুই বা ততোধিক বার বমি করে থাকে, এটাকে অনেকে দুধ তোলা বলে সম্মোধন করে থাকে। এতে খাদ্যথলির খাবারগুলো খাদ্যনালী হয়ে মুখ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। একেই ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে Gastroesophageal Reflux। বার বার বমির কারণে যদি বাচ্চার ওজন বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও বাচ্চা ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন তাকে বলা হয় Gastroesophageal Reflux disease।

খাদ্যনালী, খাদ্যথলি, ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদন্ত্রে অনেকগুলো ঘা বা আলসার হয়ে নরম পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে। এ অবস্থাকে বলা হয় Crohns disease। আর এই ঘা বা আলসার যদি শুধু বৃহদন্ত্রে দেখা দেয় তখন তাকে বলা হয় Ulcerative colitis। লম্বা সময় ধরে পেটে ব্যথা ও ঘন ঘন রক্ত মিশ্রিত পাতলা পায়খানা এ রোগের অন্যতম লক্ষণ।

বাচ্চাদের অনেক সময় দুধ ও দুধজাতীয় খাবার হজম হতে চায় না। সাথে ঘন ঘন পেটে ব্যাথা, তরল অথবা শক্ত পায়খানা হয়ে থাকে। পরিবারে অন্য কেউ এই রোগে আক্রান্ত থাকলে বাচ্চাদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

বাচ্চাদের পেটে ব্যাথার অন্যতম প্রধান কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। অবশ্য কৃমির উপদ্রব হলেও নাভির চারপাশে ব্যাথা হতে পারে। কোন কারণে খাবারে বদ-হজম বা ডায়রিয়া হলেও পেটে কামড় দিয়ে ব্যাথা হতে পারে। সাধারণত নাভির নীচে বা তলপেটে ব্যাথা হয় প্রস্রাবে ইনফেকশন এর জন্য। নাভির ডান দিকে প্রবল যন্ত্রনাকে এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যাথা মনে করা হয়। নাভি থেকে সোজা উপরের দিকে বুক-জ্বালা বা ব্যাথা অনুভব হয় গ্যাসের জন্য। উপরে ডান দিকে পিত্তথলির পাথর, লিভারে প্রদাহ অথবা ফোঁড়া হলে প্রবল ব্যাথা অনুভূত হয়। অন্যদিকে উপরে বাম দিকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হয় অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহের কারণে।

অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ হলে পেটের উপরিভাগ ও বাম পাশে তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রনা হয়ে থাকে। বাচ্চারা অনেক সময় ব্যাথা পেলে, পিত্তথলিতে পাথর হলে অথবা কোন অজ্ঞাত কারণে অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ হতে পারে।

খাদ্যথলির এসিড অথবা হজমের এনজাইমগুলোর কারণে খাদ্যথলিতে (Gastric ulcer) অথবা ক্ষুদ্রান্তের বিভিন্ন জায়গায় (Duodenal ulcer) ঘা বা আলসার হতে পারে, তখন তাকে আমরা পেপটিক আলসার রোগ (PUD) বলে থাকি। এতে নাভির উপরের দিকে মধ্যখানে জ্বালা-যন্ত্রনা বা ব্যাথা হয়ে থাকে।